প্রকাশিত: Thu, Apr 6, 2023 3:20 PM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 4:19 AM

ট্রাম্প প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হলো

রাজিক হাসান : ব্যবসা চালাতে গিয়ে ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার মামলায় জড়াতে হয়েছে। কিন্তু তিনি দমেননি। একটা মামলা তো আসলে শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী আগ্রাসনের উপরই ছিলো। একটা প্রাইভেট ইউনিভারসিটি খুলেছিলেন আসলে সেটা একটা আবাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিলো মাত্র। ইউনিভারসিটি কথাটা লেখা থাকায় সরকার বাধা দেয় তখন নাম বদল করে ট্রাম্প ইন্টার প্রুনিয়্যাল ইন্সটটিউট রাখা হয়। অন্যদিকে প্রতারিত শিক্ষার্থীরা মামলা করে। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূর্ণ দিয়ে তিনি আদালতের বাইরে ছাত্রদের সঙ্গে রফা করে নেন। ট্রাম্প মামলার বিচারকের নামে রটনা করে দেন যে লোকটি আসলে ম্যাক্সিকান, অ্যামেরিকান নয় সে পরিচয় গোপন করে আছে।

ট্রাম্প আগা গোরা একজন ব্যবসায়ী। তার পিতা ও পিতামহও ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ব্যবসাটাকে বিশাল ও বহু বিচিত্র করেন। তার ব্যবসার ক্ষেত্র একটা নয়, অসংখ্য। উত্তরাধিকার সূত্রে যা পেয়েছিলেন নিজের দক্ষতা ও ব্যবসা বুদ্ধি খাটিয়ে তাকে গণস্পর্শী করে তুলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবেরদের মধ্যে যারা হত্তাকর্তা তাদের মধ্যে ট্রাম্পও আছে। ট্রাম্পের প্রধান ব্যবসা আবাসন। সঙ্গে আছে হোটেল আর ক্যাসিনো। পূঁজিবাদি বিশ্বের রাজধানী নিউইয়র্কের ওয়ালস্ট্রীটে তার ভবন আছে ৭০ তলা, ৭২ তলা, ৫০ তলা, ৪৪ তলা, অসংখ্য দালান তৈরি করেছেন অ্যামেরিকার যত্রতত্র। বিনোদন ও স্পোর্টস-এ তার ব্যবসা অনেক রকমের। প্রত্যেকটি রমরমা। 

টেলিভিশন আছে, তাতে তিনি নিজে শো করে থাকেন। মিস ইউনিভার্স, মিস ইউ এস এ, মিস টীন ইউ এস এ। আয়োজন করেছেন পেশাদার কুস্তি প্রতিযোগীতার। নানার বাড়ী স্কটল্যান্ডে মস্ত এক গলফ কোর্স আর ক্লাব খুলেছেন। স্থানীয়রা আপত্তি করেছিলো, তখন তিনি খবর রটিয়েছিলেন এই প্রজেক্ট থেকে ৬০০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সেটা আসলে হয়নি, হয়েছে মাত্র ২০০ জনের কর্মসংস্থান। এসব নিয়ে এক ব্রিটিশ চলচ্চিত্র নির্মাতা একটা ছবি তৈরি করেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন ‘ুড়ঁ যধাব নববহ ঃৎঁসঢ়বফ’. এই ছবি যাতে টেলিভিশনে না দেখানো হয় ট্রাম্প সেজন্য মামলা করেছিলো। শেষ পর্যন্ত মামলা টিকেনি ছবিটি দেখানো হয়েছে। স্কটল্যান্ডের গলফ মাঠ ছাড়াও ট্রাম্পের আরও ১৮টি গলফ মাঠ আছে নানা জায়গায়।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ৭০০ ক্লাবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি একজন প্রোটেস্ট্যান্ট, একজন প্রেসবিট্যারিয়ান। অনেক বছর ধরে গির্জার সঙ্গে আমার একটি ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি ধর্ম একটি বিস্ময়কর জিনিস। আমি মনে করি আমার ধর্ম অপরূপ। 

গত নির্বাচনী প্রচারকার্যের ডোনাল্ড তার শ্রোতাবৃন্দদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন তার বই ‘দ্য আর্ট অব দ্য ডিল’ হলো তার দ্বিতীয় পছন্দের গ্রন্থ এবং তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা কী জানো আমার প্রথম পছন্দের বই কোনটি? বাইবেল। কোনো কিছুই বাইবেলের সমতুল্য নয়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার জন্য ইসলাম ও খ্রিষ্টিয়ানিটিকে ঝাণ্ডা হিসেবে ব্যাবহার করেছে। সে একজন নন-সেকুলার, ইসলাম বিরোধী এবং নারী লিপ্সু খ্রিস্টান। আমেরিকার মতো দেশে এমন এক নেতা কী করে হয় দেশের প্রধান? 

আসলে বৃহৎ জনগণ কখনই ব্যভিচার বিষয়টি নেয় না আমলে। আমাদের দেশে যেমন এরশাদ, ইতালিতে বার্লুস্কোনি, আমেরিকাতে বিল ক্লিনটন। তারা গ্রেট এন্টারটেইনার। জনগণ ভোট দেয়। আরও বেশি দেয়। হিলারীর নির্বাচন মেনিফেস্টোতে ছিল না কোনো চমক। পরিষ্কার ছিল না হিলারীর ‘লিবারিলিজম’ ও ‘ইনক্লুসিভ্নে’ এর স্লোগান। স্লোগানটি বড়ই অসচ্ছ্ব। ফাঁস হয় হিলারী-আই এস যোগসূত্রের খবর। আই এস জন্মের খবর। অস্ত্র সাপ্লাই আর বিক্রির খবর। খসে পরে ওবামা-হিলারী’র নারীবাদ ও মানবতার ছদ্ম আবরণ। খারাপ হলেও ট্রাম্পের বক্তব্য ছিলো পরিষ্কার। ছিলো নতুন আওয়াজ। ট্রাম্প-পুতিন আই এস ইস্যুতে এক। মধ্যপ্রাচ্য-আই এস ইস্যুতে তারা স্থির প্রতিজ্ঞ। পুতিন-ট্রাম্প নীতিতে, আসবে পরিবর্তন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। ট্রাম্পের ভোট জেতার মূল কারণ। 

ট্রাম্প হচ্ছেন প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হলো। তার বিরুদ্ধে ৩৪ টি অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষতি হতে পারে, এমন তথ্য লুকাতে তিনি নকল কাগজপত্র তৈরি করেছেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এক পর্ন তারকার মুখ বন্ধ করার জন্য তাকে অর্থ ঘুষ দিয়েছিলেন। পর্ন ছবির ওই তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস জানিয়েছিলেন মি. ট্রাম্পের সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিলো। ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আদালত থেকে ফ্লোরিডায় ফিরে যাওয়ার পর মার-এ লাগোর বাড়িতে ফিরে গিয়ে অভিযোগ করেন, এসব মামলার মানে হচ্ছে পুরো জাতিকে অপমান করা। সন্দেহ নেই আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফেসবুক থেকে